নিষ্কাম দৃষ্টিতেও তাকানো যায়
রসুল (সা.) নারী ও পুরুষ সাহাবিদেরকে একই মসজিদে একসঙ্গে বসিয়ে দীন শিক্ষা দিয়েছেন। যে সাহাবিগণ সদ্য জাহেলিয়াত থেকে মুক্ত হয়ে ইসলামের জ্যোতিপ্রাপ্ত হয়েছেন তারাও তো কোনোদিন মসজিদে কোনো বেগানা নারীকে উত্যক্ত করেননি। রসুলাল্লাহ তো নারী ও পুরুষদেরকে আলাদা করে রাখার জন্য মসজিদের মধ্যে কোনো কালো পর্দা বা পৃথক কক্ষের ব্যবস্থা করেননি। নারী-পুরুষ সাহাবিরা একত্রে যাবতীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতেন। সেই মসজিদ থেকে শুরু করে বিপদসংকুল যুদ্ধের ময়দান পর্যন্ত ছিল নারীদের দীপ্ত পদচারণা।
.
আল্লাহ নিজেই বলে দিলেন যে, মো’মেন নারী ও পুরুষগণ একে অপরের সহযোগী ও বন্ধু। তারা মানুষকে সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখবে (সুরা তওবা: ৭১)। সুতরাং মানুষকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধাদানের দায়িত্ব আল্লাহ কেবল পুরুষকে দেননি, নারীদেরকেও দিয়েছেন। রসুলাল্লাহর সাহাবিগণ প্রমাণ করে দিয়েছেন যে শালীনতার সঙ্গে কাজ করা যায়, নিষ্কাম দৃষ্টিতেও তাকানো যায়, ব্যভিচার-ধর্ষণ এড়াতে নারীদের মুখসহ সর্বাঙ্গ আবৃত হয়ে থাকার বা গৃহকোণে বসে থাকার প্রয়োজন পড়ে না। প্রয়োজন পড়ে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণের, প্রয়োজন পড়ে আল্লাহ যতটুকু বলেছেন ততটুকু করব, তা নিয়ে বাড়াবাড়ি করব না- এমন সিদ্ধান্তের।
.
এ সিদ্ধান্তই রসুলাল্লাহর হাতে গড়া জাতিটিকে উম্মাতে ওয়াসাতা বা ভারসাম্যপূর্ণ জাতিতে পরিণত করেছিল। পর্দা সংক্রান্ত বিষয়ে বাড়াবাড়ি করে বর্তমানে নারীকে কার্যত পুরোপুরি গৃহবন্দী করে রাখার বিধান জারি করে দেওয়া হয়েছে। যারা কোনো জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যাবে তাদেরকেও মুখমণ্ডলসহ আপাদমস্তক ঢেকে রাখতে হবে বলে ফতোয়া প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু পবিত্র কোর’আনের সুরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুস্পষ্টভাষায় বলেছেন যে, তারা (মো’মেন নারীরা) যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত তাদের আভরণ প্রদর্শন না করে। অর্থাৎ আপাদমস্তক ঢেকে রাখার বিধানটা বাড়াবাড়ি, সাধারণ প্রকাশমান অঙ্গগুলো খোলা রাখাই আল্লাহর নির্দেশনা।
.
এই অঙ্গ কোনগুলো সেটা নিয়ে প্রসিদ্ধ ফেকাহ গ্রন্থ হেদায়াহ-তে বলা হয়েছে যে, মুখমণ্ডল এবং কব্জি পর্যন্ত উভয় হাত খোলা রাখার যৌক্তিক কারণ হলো এই যে, পুরুষদের সঙ্গে মহিলাদের লেনদেন তথা দেওয়া নেওয়ার আবশ্যকতা রয়েছে। কাজেই মুখমণ্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত খোলা রাখারও বিশেষ জরুরত রয়েছে [আল হেদায়াহ (৪র্থ খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৬৯ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)]। যখন পরবর্তী আলেমদের অতি বিশ্লেষণ দ্বারা উদ্ভাবিত, বানানো শরিয়ত নারীকে কার্যত অবরুদ্ধ করল তখন দীন ভারসাম্য হারালো। ধীরে ধীরে জাতিও ভারসাম্য হারালো। যারা ঐ বিকৃত দীনকে বিক্রি করে জীবিকানির্বাহ করতে লাগলেন, সবচেয়ে বেশি ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হলো তাদের মধ্যেই।
.
রসুলাল্লাহ নারী পুরুষকে একত্রে বসিয়ে দীন শিখিয়েছেন কিন্তু এরা নারী ও পুরুষের চেহারা দেখাই হারাম করল। এই বাড়াবাড়ির ফল গিয়ে পৌঁছল ধর্ষণে। না, কেবল ধর্ষণেই সীমাবদ্ধ থাকলো না। নারীদেরকে দুষ্প্রাপ্য বানিয়ে ফেলায় তারা হাত বাড়ালেন মাসুম শিশুদের দিকে। যেখানে আল্লাহ প্রয়োজনে বহু বিবাহের অনুমতি দিয়েছেন তারা সেই সিরাতুল মুস্তাকিমে, সোজা পথে হাঁটলেন না। হাঁটলেন বাঁকা পথে। সেই বাঁকা পথ গিয়ে পৌঁছল বলাৎকার অবধি। যারা কওমে লুতের পরিণাম ওয়াজ করে মানুষকে শোনান তারাই সেই ধ্বংসের ইতিহাস ভুলে গেলেন। অথচ আল্লাহ বলেন, স্মরণ কর লুতের কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ? অথচ এর পরিণতির কথা তোমরা অবগত আছ! তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক বর্বর সম্প্রদায় (সুরা নামল: ৫৪-৫৫)।
No comments:
Post a Comment